যায়তুন বা অলিভ অয়েল

বর্তমান সময়ে এসেও আমাদের মধ্যে জলপাই আর অলিভের পার্থক্য পরিষ্কার না। আমরা এখনো জলপাই আর অলিভ বা যাইতুনকে এক ভেবে  গুলিয়ে ফেলছি। অলিভ এবং জলপাইর বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হলো: 

আমাদের দেশে হেমন্তকালে যে জলপাই নামের ফলটা পাওয়া যায় সেটার বৈজ্ঞানিক নাম Elaeocarpus serratus। এটা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিজস্ব ফল – এলাইওকারপেসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর ইংরেজি নাম Ceylon Olive. অন্যদিকে কুরআনে যে যায়তুন ফলের কথা বলা হয়েছে সেটার বৈজ্ঞানিক নাম Olea europaea। এটি অলিয়েসি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। একে ইংরেজিতে শুধু Olive নামেই ডাকা হয়। যায়তুন মূলত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলগুলোর ফল হলেও এখন আস্তে আস্তে বিভিন্ন  জায়গাতেও আবাদ হচ্ছে।  

অলিভ বা যাইতুন কিছুটা তেতো স্বাদের তারচেয়ে বড় কথা এতে প্রচুর কষ থাকে তাই এটি কাঁচা অবস্থায় খাওয়া যায় না। সেজন্য এটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় খাওয়ার উপযোগী করা হয়। 

অন্যদিকে আমাদের দেশী জলপাই টক স্বাদের হয়ে থাকে। এটি কাঁচা, পাকা বা রান্না/আচার করে খাওয়া যায়।

আজ থেকেও প্রায় কয়েক হাজার বছর পূর্বেও ব্যবহার করা হত রুপ্ চর্চায় এই যায়তুনের তেল। এতে যে বিশেষ গুণ রয়েছে তা অন্য ভোজ্য তেলে নেই বা প্রসাধনী গুণও নেই। 

১০০ গ্রাম খাবার উপযোগী যায়তুনের পুষ্টি উপাদান নিম্নরূপ :

খাদ্য শক্তি ১৪৬ কিলোক্যালরি, শর্করা ১৬.২ গ্রাম, আঁশ ৩.৩ গ্রাম, আমিষ ১.০৩ গ্রাম, ভিটামিন-ই ৩.৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে-১.৪ আইইউ, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৫২ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪২ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১১ মিলিগ্রাম। 

যায়তুন চুলের সৌন্দর্য বর্ধন ও হজমে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ আঁশ পেটের মল তৈরি ও বের হ’তে সাহায্য করে এবং মানব দেহের লাইপো-প্রোটিনের পরিমাণ কমিয়ে হার্ট বা হৃদপিন্ডকে সুস্থ রাখে। যায়তুনে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে, যা ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করতে সাহায্য করে।

যায়তুন একটি বরকতয় ফল। কেননা, আল্লাহ তাআলা সূরা তীন এ যায়তুন এর কসম খেয়েছেন। আল্লার রাসূল সা. এর তেল খেতে ও মালিশ করতে বলেছেন। তিনি বলেন: “তোমরা যায়তুনের তেল খাও এবং এর দ্বারা মালিশ কর বা শরীরে মাখ। কেননা, তা বরকতময় গাছ থেকে আসে।” [তিরমিযী, আহমদ, ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন]

Olive oil

রাসুল(সা:) যেহেতু ব্যবহার করতে বলেছেন এতে নানাবিধ উপকারিতা থাকাটাই স্বাভাবিক। যাইতুন তেলের কয়েকটি উপকারীতা জেনে নেওয়া যাক:

* যাইতুন রক্তের কার্যক্ষমতা বাড়ায়, রক্তকে তরল রাখে ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই নিয়মিত যাইতুন তেলে রান্না খাবার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

* যাইতুন তেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়তা করে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

* যাদের হাত পায়ের নখ ভেঙে যাওয়ার অভ্যাস আছে তারা যাইতুন তেল ম্যসাজ করে ভঙ্গুরতা রোধ করতে পারেন।

* রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রাটা বেশি থাকলে যাইতুনের তেলের কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন রান্নায় ও সালাদে এই তেল ব্যবহারে স্বাদ ও পুষ্টি দুটোই ঠিক রাখতে পারেন আবার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।

* ত্বকে চুলকানির সমস্যা দূর করতে যাইতুনের তেল ম্যাসাজ করতে পারেন। শিশুর ত্বকেও নিরাপদ তেল হিসেবে এই তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।

* যাইতুনের তেল মাথার ত্বকের খুশকি দূর করার জন্যও উপকারী।

* খাবারে নিয়মিত অলিভ অয়েল ব্যবহার করলে সিস্টোলিক এবং ননসিস্টোলিক রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে।

* যাইতুনের তেল মোটা হওয়ার প্রবণতা দূর করে।

* বয়ষ্কদের হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করতেও যাইতুনের তেলের দারুণ গুণ রয়েছে।

* যাইতুনের তেল চোখ ওঠা, চোখের পাতায় ইনফেকশন সারাতে দারুণভাবে সাহায্য করে।

* ত্বকের ক্ষত দ্রুত সারাতে যাইতুনের তেল সহায়তা করে।

আধুনিক বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক গবেষণাও তা প্রমাণ করেছে৷ হাতের কাছে হেয়ার ফুডের অলিভ অয়েল থাকতে বাজারের অন্য তেল আর ব্যবহার করতে যাবই বা কেন? আপনারাও ব্যবহার করতে পারেন৷ সবার ত্বকের যত্নে খুবই ভালো এই তেল।

ডক্টর জাহাঙ্গীর কবির এর সুবাদে অনেকেই কিটো ডায়েটের সাথে পরিচিত হয়েছেন। অনেকেই তাঁর ডায়েট চার্ট ফলো করছেন। আর শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরাচ্ছেন পাশাপাশি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছেন। আলহামদুলিল্লাহ। কিটো ডায়েটে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল বা এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল খেতে বলেন ডক্টর সাহেব!  

রাসুল(সা:) বলেছেন “প্রত্যেক বস্তুই তাঁর মূলের দিকে ফিরে আসে”। 

একথা বলতে বুঝানো হয়েছে আধুনিক সভ্যতার আলোতে যতোই আলোকিত হইনা কেন, পৃথিবীর প্রকৃতিক ব্যাপার গুলো সাইক্লিক আকারে ঘুর ফিরে আমাদের সামনে আসবেই। 

এই যে যায়তুন বা অলিভ অয়েল তেল। এই তেলের ব্যবহার যেমন কম ছিলো তেমনি পাওয়াও দুর্লভ ছিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা আজ উন্নতির কারনেই সবাই চিন্তা করছি শরীরে ব্যবহারের পাশে পাশে রান্নাবান্নায়ও ব্যবহার করছি। কিন্তু একটা সময়  এই তেলের গুণাগুণ বা ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের দেশের মানুষের তেমন কোন ধারণাই ছিল না। এখন এর ব্যবহার  ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।

Leave a Reply