স্যান্ডালউড ডাস্ট

চন্দন’ শব্দটির সংস্কৃত শব্দ—চন্দয়তি, চন্দতে বা ‘আহাদ্যতে ইতি চন্দন। ইউরোপবাসীরা চন্দনকে বলে “SANDAL” পারস্য ভাষায় একে বলে সন্দল’। বর্তমানে ভারতের মহীশূর, গঞ্জাম, পশ্চিমঘাট, মলয়পর্বত, কাশ্মীর, নলতিগিরি, বাম্বোই, তামিলনাড়ু, মেলগিরি, কোয়াম্বাটুর, কোড়গ, মেতাব, সিদ্ধপুর প্রভৃতি জায়গায় চন্দন গাছের চাষ হয়। চন্দন কাঠ যার বৈজ্ঞানিক নাম সাঁওতালাম অ্যালবাম। এটি একটি চিরসবুজ গাছ এবং শত বছর বাঁচে। গাছটি বিশেষত উচ্চতায় ৪ থেকে ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।

চন্দন কাঠ আসল হলে এটা হাতে নেয়ার সাথে সাথেই আপনার হাত মিষ্টি সুগন্ধে ভরে যাবে এমনকি আপনার স্থান এর চারপাশও করে দেবে সুগন্ধময়। প্রকৃত চন্দনকাঠের গন্ধ কয়েক দশক ধরে স্থায়ী হয়। চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে চন্দন এর উপরে আজও কোন ভেষজ উদ্ভিদ আবিষ্কৃত হয়নি।

এই কাঠ সাধারণত ভারী হলুদ এবং হালকা খসখসে হয়। সাদা চন্দন ও রক্ত চন্দন মূলত দুই ধরনের চন্দন পাওয়া যায়। সাদা চন্দনকাঠ তেল, সাবান, প্রসাধনী তে ব্যবহৃত হয় এবং সুগন্ধি হিসেবে ও রয়েছে এর অনেক কদর।  

চন্দন কাঠের অনেক ঐতিহ্যগত ব্যবহার আছে। চন্দনের অনেক ধরন রয়েছে ,একেক চন্দনের গুন একেক রকম, চন্দন পাঁচ প্রকার – (১) শ্বেতচন্দন, (২) রক্তচন্দন,(৩) কুচন্দন, (৪) কালিয়ন এবং

 (৫) বৰ্ব্বরিকা। 

প্রাচীর বিশিষ্ট সমৃদ্ধ জনপদের সময়ে বদ্যি কিংবা ধর্মগুরু হাট থেকে আনত একরকম সুগন্ধি কাঠ। এটি ধর্মীয় দিক দিয়ে যেমন গুরুত্ব বহন করে তেমনি ভেষজ চিকিৎসায়ও রয়েছে ব্যবহার। সেসময়কার ঝি-বউদের কাছে আবার এই সুগন্ধি কাঠের অন্যরকম কদর ছিল। তারা এই কাঠ গুঁড়ো করে রূপচর্চায় ব্যবহার করত তারুণ্য আর ত্বকের লাবন্যতা ধরে রাখতে৷

ইন্দোনেশিয়া, ভারত উপমহাদেশ, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের বহুলব্যবহৃত এই সুগন্ধি কাঠ একসময় ছড়িয়ে গেল দুনিয়া জুড়ে। তেল বানিয়ে, ওষুধের উপকরণ হিসেবে কিংবা নানান প্রসাধনীতে এর ব্যবহার হতে লাগল।

এমনকি সাড়ে চৌদ্দশ বছর আগে ইসলাম ধর্মের রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-ও এই কাঠের ব্যাপারে বলেছেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: তোমরা অবশ্যই উদে হিন্দী (চন্দন কাঠ) ব্যবহার করবে কেননা তাতে সাতটি রোগের প্রতিষেধক রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হলো ফুসফুস আবরক ঝিল্লির প্রদাহ।

এত মর্যাদাপূর্ণ গাছ যার জগৎজোড়া খ্যাতি, তা এখনো সমান ভাবে সমাদৃত। আমাদের দেশেও এর প্রচুর চাহিদা। তবে এই শ্বেত চন্দন বাংলাদেশে পাওয়া যায় না বলে আমদানী করতে হয়। 

অনেকেই চন্দন কেনেন কিন্তু এরপর বুঝতে পারেন না চন্দন টা ব্যবহার করবেন কিভাবে। যেহেতু খাঁটি চন্দন কখনোই একেবারে মাডি ডাস্ট হয় না তাই এর সাথে কিছু একটা মিশিয়ে নিতে হয়। এতে পেস্ট ভালো হয় ও লাগাতে সহজ হয়। 

Sandalwood dust powder

রূপসচেতন মানুষের কাছে খুব প্রিয় একটি নাম চন্দন। সেই প্রাচীন যুগ থেকেই অভিজাত সৌন্দর্যচর্চায় চন্দনের ব্যাবহার হয়ে আসছে। চন্দন একটি অসাধারন প্রাকৃতিক উপাদান । ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে, বলি রেখা দূর করতে, ব্রণ এর সমস্যায়, ড্রাই স্কিনে, ত্বকের দাগ কমাতে, রোদে পোড়া ভাবের ক্ষেত্রে, মুখের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা পরিষ্কার করতে,  স্কিনের গ্লো বাড়াতে, চন্দন ম্যাজিকের মতো কাজ করে।  

যদি ডার্ক সার্কেল থাকে তাহলে সামান্য পরিমাণ চন্দনের গুড়ার সঙ্গে গোলাপ জল মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগান এবং এভাবে সারারাত রেখে সকালে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আশা করি মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ্‌।

রোদে পোড়া দাগ দূর করতে চন্দন বেশ কার্যকর। শসার রস, চন্দনের গুঁড়ো, দই ও গোলাপজল একসাথে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে রোদে পোড়া ত্বকে লাগিয়ে রাখুন। ১৫-২০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন। এই ফেস প্যাক রোদে পোড়া ভাব কমাবে এবং রোদের পোড়ার কারণে ত্বকের জ্বলা কমাতে সাহায্য করবে, ইনশাআল্লাহ্‌।

যাদের ত্বক সেনসিটিভ তাদের উচিৎ রূপচর্চার ক্ষেত্রে বেশি সচেতন থাকা। সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রে চন্দনের গুড়ার সাথে হালকা টক দই মেখে তা ত্বকে ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।

ব্রনের সমস্যা সমাধানে চন্দনের গুঁড়োর আসাধারন ভূমিকা রয়েছে। ব্রণের চিকিৎসায় হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে চন্দন গুঁড়ো। প্রথমেই আপনাকে নিতে হবে ১টেবিল চামচ চন্দন গুঁড়ো, ২ টেবিল চামচ গোলাপ জল, ১ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল (যদি অয়েল না থাকে তাহলে ব্যবহার করবেন না)। এবারে সমস্ত উপাদান গুলে পেস্ট বানিয়ে পরিষ্কার ত্বকে লাগান। ১০/১৫ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

চন্দন  ত্বকের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি, কালো দাগ, ব্রণের দাগসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করে। শুধু তাই নয়, ব্রণের দাগ, সূর্যের পোড়াভাব ও বলিরেখা দূর করে ত্বকে একটি শান্ত শীতল ভাব এনে দিতে পারে এই চন্দন।

চন্দনের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি কিছু কার্যকরী ফেসপ্যাক:

১। মধু চন্দনের ফেইসপ্যাক:

এক চা চামচ চন্দনের গুঁড়োর সাথে এক চা চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি মুখে ভাল করে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। চন্দন ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করবে আর মধু দূর করবে ত্বকের রুক্ষতা।

২। চন্দন, মধু, ও হলুদের ফেইস প্যাক:

আধা চা চামচ চন্দন গুঁড়া, দুই চা চামচ বেসন, এক চিমটি হলুদ, এবং কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। মুখ ও ঘাড়ে ভাল করে লাগান। ৩০ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করলে খুব দ্রুত ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ত্বকে একটি গোলাপি আভা আসবে।

৩। চন্দন ও দুধের ফেইস প্যাক:

এক চা চামচ গুঁড়া দুধ, কয়েক ফোঁটা চন্দনের তেল বা চন্দন গুঁড়া, এবং গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। ২০-১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি বেশ কার্যকরী প্যাক। এই প্যাক ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক রেখে  ত্বকের রুক্ষতা দূর করার সাথে সাথে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

৪। অ্যালোভেরা এবং চন্দনের ফেইস প্যাক:

এক চা চামচ অ্যালোভেরা জেল এবং এক চা চামচ চন্দনের গুঁড়ো মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাকটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। প্যাকটি ত্বকের র‍্যাশ, জ্বালাপোড়া দূর করতে উপকারী।

৫। চন্দন ও টমেটোর ফেইস প্যাক:

আধ চা চামচ চন্দন গুঁড়া,  আধা চা চামচ টমেটোর রস,  আধা চা চামচ মুলতানি মাটি ও কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এই প্যাকটি মুখ এবং ঘাড়ে ভাল করে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটি অনেক বেশ কার্যকরী। ত্বকের অতিরিক্ত তেল ও ময়লা দূর করে ত্বকের লোমকূপ পরিষ্কার করতে ও হোয়াইট হেডস/ ব্ল্যাক হেডস দূর করতে এই প্যাকটি সাহায্য করে।

বাংলাদেশে পাওয়া যায়না শ্বেত চন্দন তাই আমদানি করেই আনতে হয়। হেয়ার ফুডের  চন্দন গুঁড়ো একদম অরিজিনাল। আর হেয়ার ফুড পণ্যের মান নিয়ে কখনো আপোষ করে না। বেছে বেছে একদম অরিজিনাল পণ্যই আনে। অরিজিনাল চন্দন কাঠ একদম মিহি গুঁড়ো হয় না, দানা দানা থাকে। যেহেতু এই গুঁড়ো দিয়ে সরাসরি পেস্ট বানানো যায় না তাই কিছু একটা মিশিয়ে নিতে হবে যাতে পেস্ট তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে মুলতানি মাটি, বেসন, দই, শসা, গোলাপ জল, গাজর প্রভৃতি উপাদান মিশিয়ে নিয়ে পেস্ট তৈরি করা যায়। 

এই প্যাক-গুলো ব্যবহার করে সুন্দর ত্বক পাবেন এটা বলতে পারি। তবে যদি সপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ব্যবহার করেন তবে ভালো ফল পাবেন। একবার ব্যবহার করেই যদি ফল আশা করেন, তবে সেটা নিতান্তই অবান্তর বলা ছাড়া আর কোন উপায় দেখি না। নিয়মিত ব্যবহার করলে ভাল ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ্। 

Leave a Reply