ক্যাস্টর ওয়েল

ক্যাস্টর ওয়েল হচ্ছে ভেজিটেবল ওয়েল। ক্যাস্টর বীজ থেকে এই তেল পাওয়া যায়। মূলত এই তেল সর্বপ্রথম উৎপাদিত হয় ভারতে। সময়ের সাথে সাথে পরে বিভিন্ন দেশে এ তেলের উৎপাদন শুরু হয়। যা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। ক্যাস্টর ওয়েল বর্ণহীন, স্বতন্ত্র স্বাদ এবং গন্ধ বিশিষ্ট। এটির বাষ্পীভবন মান ৩১৩ °সে (৫৯৫ °ফা) এবং ঘনত্ব ৯৬১ kg/m3। 

ক্যাস্টর ওয়েলে রয়েছে ভিটামিন ই, মিনরেলস, প্রোটিন, এসেন্সিয়াল ফ্যাটি এসিড যা চুল পড়া রোধ করার সাথে সাথে নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। এটি চুলের যাবতীয় সমস্যা দূর করে এর স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনে।

castor oil

ক্যাস্টর ওয়েলের কিছু গুণাবলি নিয়ে আলোচনা করা হলো:
১। ক্যাস্টর ওয়েলে এমন কিছু প্রোপারটিজ আছে যা কন্সটিপিশনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। কন্সটিপিশনের জন্য ১ চামচ ক্যাস্টর ওয়েল খেলে ভালো উপকার পাবেন।
২। যাদের স্কিন ড্রাই অনেক বেশী তারা কিন্তু সরাসরি ক্যাস্টর ওয়েল স্কিনে ম্যাসাজ করতে পারেন প্রাকৃতিক ময়েশ্চেরাইজার হিসেবে।
৩। ক্যাস্টর ওয়েলে আছে এন্টি-ইনফ্লেনেটরি প্রোপারটিজ যা স্কিনের ব্রেক আউট রোধ করে এবং ব্রণের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৪। চুলের গ্রোথের জন্য ,চুল পড়া কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই ক্যাস্টর ওয়েল।কিন্তু সেক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য তেলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করবেন ।
এছাড়াও ক্যাস্টর ওয়েলের আরও কিছু গুনাবলি রয়েছে। হেয়ার ফুডে এই অসাধারণ গুণ সমৃদ্ধ ক্যাস্টর ওয়েল পেয়ে যাবেন সূলভ মূল্যে।
ক্যাস্টর অয়েল ত্বক ও চুলের জন্য উপকারি হিসেবে ঐতিহ্যগতভাবে ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে কসমেটিক ইন্ডাস্ট্রিগুলো বিভিন্ন ধরণের বিউটি প্রোডাক্ট তৈরিতে প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহার করছে ক্যাস্টর অয়েল।
ক্যাস্টর অয়েলের কয়েকটি উপকারিতা জেনে নেয়া যাক:
১। চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করেঃ
ক্যাস্টর অয়েল চুলের জন্যও বেশ উপকারী একটি তেল। এটি চুলকে ঘন হতে সাহায্য করার পাশাপাশি চুলকে উজ্জ্বল করে। মাথার তালুর pH এর স্তরের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে রিসিনোলেইক এসিড। এছাড়াও খুশকি দূর করতে সাহায্য করে, চুলের আগা ফেটে যাওয়া ও চুলের ভঙ্গুরতা রোধে সাহায্য করে। সপ্তাহে ২ দিন রাতের বেলা গরম ক্যাস্টর অয়েল মাথার তালুতে ও চুলে ভালো করে ম্যাসেজ করুন। সকালে চুল ধুয়ে ফেলুন।
২। শুষ্ক ত্বকে পুষ্টি প্রদান করেঃ
শুষ্ক ত্বকে চমৎকার ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ক্যাস্টর অয়েল। এতে উচ্চমাত্রার ফ্যাটি এসিড থাকে বলে এটি ত্বককে স্বাস্থ্যবান রাখে ও উজ্জ্বল করে এবং ডারমাটাইটিস ভালো করে। এছাড়াও ত্বকের ইলাস্টিন ও কোলাজেনের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা ত্বকের বয়স বৃদ্ধি ধীর করে এবং আপনার ত্বককে তরুণ রাখতে সাহায্য করে। সমপরিমাণ ক্যাস্টর অয়েল ও নারিকেল তেল মিশিয়ে শুষ্ক ত্বকে ব্যবহার করুন। ২০-৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। রাতে মুখ ধোয়ার পরে মুখে কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর ওয়েল লাগিয়ে কয়েক মিনিট যাবত আস্তে আস্তে ম্যাসেজ করুন। পরদিন আপনি হাইড্রেটেড ও তরতাজা লুক পাবেন।
৩। বলিরেখা দূর করেঃ
এই প্রাকৃতিক তেলটি চোখের কুঁচকানো ভাব, ফাইন লাইন ও বলিরেখা দূর করতে পারে। এই তেল সহজেই ত্বকের ভেতরে স্তরে প্রবেশ করতে পারে, কিন্তু ত্বকের ছিদ্র বন্ধ করেনা। আসলে এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বককে পুষ্টি সরবরাহ করে। এছাড়াও এটি ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে। ঘুমানোর আগে কয়েকফোটা ক্যাস্টর অয়েল মুখের ত্বকে লাগিয়ে বৃত্তাকারে ম্যাসেজ করুন। প্রত্যাশিত ফল পাওয়ার জন্য ৪-৬ মাস নিয়মিত ব্যবহার করুন।
৪। আইভ্রু ও আইল্যাশ ঘন করেঃ
যদি আপনি মোটা ভ্রু ও ঘন পাপড়ি চান তাহলে এর সমাধান হচ্ছে ক্যাস্টর অয়েল। চুলের গোঁড়ার ফলিকলকে উদ্দীপ্ত করা ও পুষ্টি সরবরাহ করার মাধ্যমে ক্যাস্টর অয়েল আপনার আইভ্রু ও চোখের পাপড়ি ঘন করতে সাহায্য করে। ক্যাস্টর ওয়েলের মধ্যে একটি তুলার বল চুবিয়ে নিয়ে আপনার ভ্রু এর উপর ঘষুন। প্রতি রাতেই এটি ব্যবহার করুন যতদিনে আপনার কাংখিত মোটা ভ্রু না হয়। চোখের পাপড়ি বড় ও ঘন করার জন্যও প্রতি রাতে আপনার চোখের পাপড়ির উপর ক্যাস্টর অয়েল লাগান কয়েক সপ্তাহ যাবত। পাপড়িতে তেল লাগানর সময় চোখ বন্ধ করে তারপর লাগান।
তাছাড়া ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারে প্রেগনেন্সির স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে, কড়া পরা চামড়া নরম করতে, পায়ের গোড়ালির ফাটা দূর করতে সাহায্য করে, ত্বকের প্রদাহ কমতে সাহায্য করে, ব্রণ কমতে সাহায্য করে, অসময়ে চুল পাকা রোধ করে ও চুলকে কন্ডিশনিং করে।
সাবধানতাঃ ক্যাস্টর ওয়েল ব্যবহারের পূর্বে সামান্য তেল ত্বকে লাগিয়ে পরীক্ষা করে দেখা উচিত কোন অ্যালার্জিক রিয়েকশন হয় কিনা। তারপর ব্যবহার করুন।

Leave a Reply